কথা-রামায়ণ
আদি কান্ড
শ্রীরামের জন্ম
চিত্তাকাশ – জীবাত্মা ও মন জীবাত্মা – হের সখে! করি আলোকিত সূতি গৃহ ওই রূপের প্রভায়, আবির্ভূত হইলেন রাম রঘুমণি। অন্তরীক্ষ হতে যত দেবগণ জয় জয় জয় রবে পুষ্মবৃষ্টি করেন আনন্দে।
শঙ্খ চক্র গদা পদ্মধারী তনয়ে হেরিয়া হ’য়ে কৃতাঞ্জলি, শ্রীরাম জননী কহিছেন স্তুতিবাণী।
মন – আহা! হরিতে ধরার ভার, ভক্তদলে করিতে উদ্ধার, অযোধ্যাগগনে আজি, হইলরে ‘শ্রীরাম’ ‘চন্দ্রের’ উদয়। এ নীল চন্দ্রের আলোকে আলোকিত হইবে ভুবন। রাম নাম শ্রবণে কীর্ত্তনে লীলাধ্যানে, মানবের অজ্ঞান কলুষ আঁধার যাবে চলে চিনদিন তরে।
অযোধ্যা – সূতিকাগৃহ শঙ্খ চক্র গদা পদ্মধারী নারায়ণ ও যুক্তকরে কৌশল্যা
কৌশল্যা – হে শঙ্খ চক্র গদাধর দেবদেব প্রণমি চরণ তব। পূর্ণ পরমাত্মা অচ্যুত অনন্ত সত্তামাত্র অখন্ড জ্ঞানময় তুমি, মন বুদ্ধি ইন্দ্রিয়াদির বেদবাদিগণ। এ বিশ্বের সৃজন, পালন, লয় কর তুমি মায়ার আশ্রয়ে। করিয়াও নাহি কর, যাইয়াও না কর গমন। শুনিয়াও নাহি শুন, দেখিয়াও নাহি দেখ কভু। অপ্রাণ অমনা তুমি, এই বাণী ব’লেছেন শ্রুতিগণ। পরমাণু সম খেলে ব্রহ্মান্ড নিচয়, তোমার জঠরে। আমার উদরে তব জনম গ্রহণ এ কেবল লোক বিড়ম্বনা। তুমি ভক্তাধীন, দেখিলাম আজ রঘুবর। সংসার সাগরে, পতি পুত্র ধনাদিতে মগ্না আমি; ভ্রমিতেছি অহর্নিশি তোমার মায়ায় তব পাদপদ্মমূলে এবে পাইলাম স্থান। হে দেব! এই অপরূপ রূপ তব থাকুক মানসে মোর। বিশ্ববিমোহিনী মায়া যেন জ্ঞান মোর না করেন আবরিত। বিশ্বাত্মন্! এ অলৌকিক রূপ কর সম্বরণ; দেখাও আমারে সুকোমল বাল কলেবর, – করি আলিঙ্গন, দুর্নিবার তমো মোর হ’ক দুরীভূত।
শ্রীনারায়ণ – হে জননী, যে সব বাসনা আছে তোমার হৃদয়ে, হইবে পূরণ তাহা। ধরণীর ভার হরিবারে, রাবণে নাশিতে আছিয়াছি ধরাপরে বিধির প্রার্থনে। পুত্র রূপে লভিতে আমারে পুরব জনমে উগ্রতপ করিছিলে তোমরা উভয়ে। ছিলে দেবমাতা তুমি আর দশরথ কশ্যপ প্রজাপতি। মম এই রূপ তুমি করিলে দর্শন পূর্ব্ব তপস্যার ফলে। তোমার আমার এ সংবাদ শ্রবণে পঠনে, মানবনিকর করিবে স্বারূপ্য লাভ। লভিবে আমার স্মৃতি মরণ সময়ে। (বালক রূপ ধারণ। কৌশল্যার ক্রোড়ে গ্রহণ, ধাত্রীর প্রবেশ)