রাগের উপর রাগ করো

শ্রীরমণ মহর্ষি || প্রকাশ কাল - April 18 2018


গতকাল একজন নবাগত আন্ধ্র যুবক ভগবানকে (মহর্ষি রমণ) ইন্দ্রিয় চাঞ্চল্যের বিষয় বলাতে তিন উত্তর দিলেন, ‘‘সবই মনের ব্যাপার, মনকে ঠিক করো।’’ বেচারী ছেলেটি বললে, ‘‘সে, তো ঠিক কথা স্বামী, কিন্তু যতই ক্রোধ দমনের চেষ্টা করি না কেন, বার বার রাগ হয়, আমি কি করব?’’
ভগবান বললেন, ‘‘ও! তাই নাকি, তবে রাগের ওপর রাগ করো তাহলে ওটা ঠিক হয়ে যাবে।’’ ঘরের সকলে হেসে উঠল। যে জগতের সবার ওপর রাগ করে সে যদি একবার ভাবে ও বিচার করে যে, সে কেন নিজের ক্রোধের ওপর রাগ করে না, তাহলে কি তার ক্রোধ দমন হবে না?
দুই কিংবা তিন বছর আগে যার ভগবানের কাছে অবাধ স্বাধীনতা ছিল এমন একজন ভক্ত, কেউ তাকে গালাগালি করেছে, এই কথা ভগবানকে পাঁচ ছ’বার বলে। ভগবান শুনেও কিছু বললেন না। যখন অনেকবার অনেকভাবে বলেও কোন উত্তর পেল না তখন সে আর না থাকতে পেরে বললে, ‘‘আমায় মিছিমিছি গাল দিলে আরও রাগ হয়। যত চেষ্টাই করিনা কেন রাগ দমন করতে পারি না; আমি কি করব?’’
ভগবান হেসে বললেন, ‘‘তুমিও তার সঙ্গে যোগ দিয়ে নিজেকে গালাগালি দাও, তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ সবাই হেসে উঠল।
ভক্তটি কিছু বুঝতে না পেরে বললে, ‘‘এতো বেশ ভাল কথা। আমিও আমাকে গালাগালি দেবো?’’
‘‘হাঁ, নিশ্চই! তারা কাকে গালি দেয়, তোমার শরীরকে, তাই না? যত রাগ অভিমানের ভান্ডার এই শরীরের থেকে বড় শত্রু আর কে আছে? আমাদের একে ঘৃণা করাই উচিত। তা না ক’রে আমরা অসাবধান হলে, কেউ গালি দিয়ে তারা বরং আমাদের এ বিষয়ে সচেতন করে দেয়। অন্ততঃ তখন আমাদের বোঝা উচিত আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে এটাকে হেয় করা উচিত। পাল্টে গালাগালি দিয়ে কি লাভ? যারা আমাদের তিরষ্কার করে তারাই আমাদের সত্যকারের বন্ধু। এ রকম লোকের সঙ্গ ভাল। যারা প্রশংশা করে তাদের মধ্যে তুমি ভুল পথে চালিত হও,’’ ভগবান বললেন।
১৯২৪ সালে জুন মাসে আশ্রমে চোর এসেছিল আর তারা ভক্তদের তো মেরেই ছিল এমনকি ভগবানের পায়েও দ’এক ঘা দিয়েছিল। পরে নিজেদের মধ্যে মারের কথা বলাবলি করার সময়ে ভক্তরা বলেছিল, ‘‘অতি বদলোক তারা ভগবানকেও মারলে।’’ ভগবান নাকি উত্তরে বলেছিলেন, ‘‘ও তোমরা ফুল দিয়ে পূজা করো, ওরা লাঠি দিয়ে করেছে। ওটাও একরকম পূজা। যদি তোমাদেরটা নি তবে ওদেরটাই বা নেব না কেন?’’ তিনি বাস্তব উদাহরণ দিয়েই শিক্ষা দেন। এটাও কি সেইরকম একটা দৃষ্টান্ত নয়?