শ্রীশ্রীউজ্জীবন

শ্রীশ্রীঠাকুর || প্রকাশ কাল - March 6 2018


শ্রীঃ ।। ১৬/৩/৬১
সীতারাম! কেবল রাম রাম রাম। রাম নাম তোমার সমস্ত সংশয় নিরসন করে দেবেন। রাম নাম তোমার কোন ভাবনা রাখবেন না। অবিরাম রাম নাম কর। ১৮১
সীতারাম! শূন্যে শূন্যে নাদ শুন্‌ছো। মা আমার শূন্যে শূন্যে করতে করতে আকাশে যাচ্ছে। উনি কে জানো তো? উনি হলেন ত্রিগুণময়ী কুলকুন্ডলিনী – তোমার কারণ দেহ, তুমি কে জান না তো? – রাম রাম কর।। ১৮২
সীতারাম! তুমি কে শুনবে? তুমি ভগবানের অংশ – ‘‘মমৈবাংশো জীবলোকে’’; তুমি ভগবানের প্রকৃতি ‘‘জীবভূতাং মহাবাহো’’। তোমাতে আর ভগবানে পৃথকত্ব নাই। ভগবান্‌ তুমি সেজে লীলা কচ্ছেন। তুমি রাম রাম করে দেহ আমি ভুলে গিয়ে প্রকৃত আমিকে আমি বলে মনে কর।। ১৮৩
সীতরাম! জীব জগৎ চিৎ অচিৎ সব ভগবানের দেহ। জগতে এমন কিছু নাই যা ভগবান্‌ নন। তুমি রাম রাম করে বহূরূপীকে ধরে ফেল।। ১৮৪
সীতারাম! সৎ চিৎ আনন্দ তিন রূপে ভগবান্‌ খেলা করছেন। যা কিছু পদার্থ আছে, সব সৎ চিৎ আনন্দময়। পাথর ওটিও সৎ-চিৎ-আনন্দময়। তোমার বুদ্ধি ওটিকে পাথর বলে মনে করছে, কিন্তু ওটি সচ্চিদানন্দময় ভগবান্‌। কেবল রাম রাম কর।। ১৮৫
সীতারাম! গাছ বল পাতা বল পশুপক্ষী যা কিছু সব সেই সচ্চিদানন্দময় ভগবান্‌। ওতে তৃপ্তি হচ্ছে না – মূর্ত রূপে দেখতে চাও, উত্তম; কেবল রাম রাম কর।। ১৮৬
শ্রীঃ ।। ১৭/৩/৬১
সীতারাম! শুনছো জয়গুরু ও সোহহং শনছো? তোমাকে আর কিছু করতে হবে না, মা যখন জেগে উঠেছেন। তথাপি তুমি যখন চুপ করে বসে থাকতে পারবে না, তখন রাম রাম কর।। ১৮৭
সীতারাম! রাম রাম করার ফল অনন্ত তা জনো। ঐ যে মা জেগে সর্ব্বদা জয়গুরু জয়গুরু কচ্ছেন তা রাম রাম করার ফল। যখন জিভ স্ববশে আছে, তখন রাম রাম করতে থাকো।। ১৮৮
সীতারাম! কাল দেখলে তো মা কেমন ধারে ভিতরে নিয়ে গেলেন। কিছু করবার ক্ষমতা রইল না। সমস্ত দিন ঠাকুরেরও উপবাস। তুমি নিশ্চিন্ত হও, অমনি করে মা তোমায় নিয়ে যাবেন, তোমার সাধ্য থাকবে না বর্হিমুখ হবার। কেবল রাম রাম কর।। ১৮৯
সীতারাম! এই রামনাম বড় সহজ জিনিস নয়। শঙ্কর শতকোটি রামায়ণ স্বর্গে মর্তে পাতালে ভাগ করে দিয়ে নিজের জন্য দুটি অক্ষর রেখে দিলেন ‘‘রা’’ আর ‘‘ম’’। তিনি পঞ্চমুখে কেবল রাম রাম করেছেন। তুমি এক মুখেই রাম রাম কর।। ১৯০
সীতারাম! যেদিন চলে যাচ্ছে আর ফিরে আসবে না। দিন দিন এগিয়ে চলেছে মরণের দিকে। মৃত্যু জয় করতে হবে মনে থাকে যেন। মৃত্যু-জয়ের মহামন্ত্র রামনাম। তুমি অবিরাম রাম রাম কর।। ১৯১
সীতারাম! শিব মৃত্যুঞ্জয় কি করে হয়েছেন জান তো? কেবল রাম রাম করে। তুমি যদি কেবল রাম রাম করতে পারো তাহলে তুমিও মৃত্যুঞ্জয় হয়ে যাবে। রাম নাম মহারসায়ন। রোগ, শোক, দুঃখ, দারিদ্র, মৃত্যু রামনামকারীকে কোন দুঃখ দিতে পারে না, তুমি কেবল রাম রাম কর।। ১৯২
সীতারাম! জয়গুরু জয়গুরু শুনছো? তুমি ভুলে যাও কিন্তু ভিতরে একবারও ভুল হয় না। কি কৃপা! তুমি রাম রাম কর – যা চাবে তাই পাবে।। ১৯৩
সীতারাম! অর্জ্জুনকে ভগবান্‌ বলেছিলেন ‘‘ময়ৈবৈতে নিহতাঃ পূর্বমেব নিমিত্তমাত্রং ভব সব্যসাচিন্‌’’ – হে অর্জ্জুন! আমি পূর্ব্বেই এদের বিনাশ করেছি, তুমি কেবল নিমিত্তমাত্র হও। তেমনি ঠাকুরটি সব করে রেখেছেন। তুমি রাম রাম করে জীবন-গ্রন্থের পাতা উল্টে চল।। ১৯৪
সীতারাম! সব কার্য্যসূচী তৈরী হয়ে গেছে, যেদিন তুমি ভূমিষ্ঠ হয়েছো। শুধু নির্ভাবনায় রাম রাম করে ভাসতে ভাসতে চল নৌকা ডোবে – তরঙ্গ (ভেলা) ডোবে না। রামনাম ভেলা। কেবল রাম রাম কর।। ১৯৫
সীতারাম! রামনাম তোমার কি করেছেন দেখছো তো? একবার তোমার প্রকৃতি ভেবে দেখ, কত ক্ষুদ্র কত নীচ তুমি, আজ রামনাম তোমায় মহাপুরুষে উন্নীত করেছেন। লোকে ভগবান্‌ বলে বলুক তুমি তো তোমাকে চেনো। আগুনে লোহা পড়ে থাকলে লোকে লোহাকে আগুন বলে। কিন্তু বাস্তবিক কি তাই? লোহা লোহা। লোহা আগুন নয়। রাম রাম কর।। ১৯৭
সীতারাম! তবে এক কথা, লোহাতে আগুনে স্বাতন্ত্র্য নাই। ভগবানই লীলা করবার জন্য জীব-জগৎ হয়েছেন, তুমি তাঁর অংশ, তুমি তাঁর প্রকৃতি, তুমি তাঁ হতে পৃথক্‌ নও। কেবল রাম রাম। অহং মম দূর হোক্‌। তুমি তোমার কেন্দ্রে একীভূত হও; রাম রাম।। ১৯৮
সীতারাম! শুনছো জয়গুরু ইঞ্জিন আরও কত নাদ। দেখ, মার কত কৃপা। তুমি ভুলে গেলেও তিনি ভোলেন না। তুমি রাম রাম কর।। ১৯৯
সীতারাম! মা বড় রামনাম ভালবাসেন। রাবণের অশোক-কাননে কেবল রাম রাম করতেন। তিনি তোমায় গুরুনাম শোনাচ্ছেন, তুমি তাঁকে রামনাম শোনাও।। ২০০
সীতারাম! তোমার চেয়ে মায়ের ভাবনা অনেক বেশী। তিনি তোমার কথা খুব ভাবছেন। তুমি শুধু রাম রাম কর, লেখ, যথাসাধ্য ধ্যান কর, কিছু না পার রাম রাম কর।। ২০১
সীতারাম! কোথায় পৌঁছুতে হবে জান তো? ওঙ্কারে। প্রণবমেব পরং ব্রহ্মাত্মপ্রকাশং শূন্যং জানন্তস্তত্রৈব পরিসমাপ্তিঃ। প্রণবই পরং ব্রহ্ম, তাতেই সব। ঐ যে ভেতর থেকে ‘‘শূন্যে শূন্যে’’ নাদ উঠে। শূন্য মানে বুঝতে পারলে। কেবল রাম রাম কর।। ২০২
সীতারাম! ব্যস্ত হয়ো না। শুধু নাদ শুনে চল। এভাবেই চিরদিন চলবে না। একদিন আসবে, যেদিন সকল সমস্যার শেষ হবে। কেবল রাম রাম কর।। ২০৩
সীতারাম! লেখবার পড়বার সময় রাম রাম করতে বলিনি, তাছাড়া অন্য সময় রাম রাম কর; রামনাম তোমায় আনন্দ-সাগরে ডুবিয়ে দেবেন। রাম রাম কর।। ২০৪
শ্রীঃ ।। ২০/৩/৬১
সীতারাম! কাল কেমন অপূর্ব আলো দেখলে? ওখানে তোমার কোন্‌ পুরুষকার কাজ করেছিল? মার যখন ইচ্ছা হবে তখন তিনি তোমায় ফিরিয়ে দেবেন। রাম রাম কর। ২০৫
সীতারাম! কোথায় পৌঁহুছিতে হবে জান তো? এক ঠাকুরটি মাত্র আছেন। যা কিছু দেখা যাচ্ছে সব তিনি। নানা রূপ সেজে তিনিই খেলা করছেন। জমাট বাঁধা তাকে ধরতে হবে। তুমি রাম রাম কর।। ২০৬
সীতারাম! ঐ শোন, জয়গুরু জয়গুরু, অতিদ্রুত মেঘ; আচ্ছা বল ঐ যে নানারূপে মা নানা গান গাচ্ছেন, ওর পরিবর্ত্তন করার সাধ্য তোমার আছে? নাই। তুমি কেবল জয়গুরু জয়গুরু শোন, আর রাম রাম কর।। ২০৭
সীতারাম! বালা, অনন্ত, মাক্‌ড়ী, হার, নথ, সব আলাদা আলাদা আকার, নাম আলাদা আলাদা। কিন্তু সব সোনা। সোনাতে বালাতে কোন তফাৎ নাই, তেমনি জগৎ আর ব্রহ্মে কোন পার্থক্য নাই, তুমি রাম রাম করতে করতে মূল উৎসে চল।। ২০৮
সীতারাম! হাঁড়ী, কলসী, সরা, মালসা, নাদা, টালী, রাণীগঞ্জের টালী, কলকে, বড়প্রদীপ, দূর্গাপ্রদীপ সব মাটি দিয়ে তৈরী হয়েছে। এদের এমন কোন অংশ নাই যা মাটি নয়। তেমনি সূর্য্য, চন্দ্র, গাছ, পক্ষী, কীট-পতঙ্গ সব ভগবান্‌ ভিন্ন এদের ভিতরে বাইরে আর কিছু নাই। তুমি রাম নাম বুঝে নাও।। ২০৯
সীতারাম! পিতলের থালা, গ্লাস, ঘটি, বাটি, পিলসুজ, ঘড়া যেমন পিতল দিয়ে তৈরী, তেমনি সব ভগবান্‌ দিয়ে তৈরী। তোমার দেহের এমন কোন অংশ নাই যা ভগবান নন। তুমি রাম রাম করে উৎস ধর।। ২১০
শ্রীঃ ।। ২১/৩/৬১
সীতারাম! রামানন্দ মহামন্ত্র পরীক্ষা পরিষদের কল্পনা খেলা করছে, উত্তম, লিখে রাখ। যদি ঐ ঠাকুরটির ইচ্ছা হয় তাহলে হবে। আর যদি তোমার চঞ্চল মনের খেয়াল হয়, জয় সীতারাম! যা হয় তা হয় – তুমি রাম রাম কর যা আসছে লিখে রেখে যাও। রাম রাম কর। ২১১
সীতারাম! জয়গুরু জয়গুরু শুনছো, কোন চিন্তা নাই! মা তোমার ভার নিয়েছেন। তুমি রাম রাম কর। উঠতে বসতে রাম রাম ভুলো না।। ২১২
সীতারাম! নর্মদা ক্রমে বর্ধিত হলেন, এর জন্য নর্মদা কোন চেষ্টা করেন নি। তেমনি সকল বিষয়ের উৎপত্তি, বর্ধন, নাশ আছে! তোমার দুটি ফুরিয়ে গেছে, এইবার নাশের পালা। রাম রাম কর। রাম রাম কর।। ২১৩
সীতারাম! ত্যাগের সঙ্কল্পও রজঃ। ভগবানের প্রসন্নতার জন্য ত্যাগ – এ ত্যাগ নির্গুণ। তুমি রাম রাম করতে করতে ত্যাগ কর।। ২১৪
সীতারাম! ত্যাগ লোক দেখিয়ে নয় গোপনে কর। আহারের কথা গোপন হবে না। অন্য যা কিছু সব গোপন কর। কেবল রাম রাম কর। মা বড় রামনাম ভালবাসেন।। ২১৫