শ্রীশ্রীউজ্জীবন

শ্রীশ্রীঠাকুর || প্রকাশ কাল - April 18 2018


সীতারাম। নর্মদার বিনা চেষ্টায় বর্ধনের মত তোমারও বান আসবেন, তুমি রাম রাম করে অপেক্ষা কর। মা না এসে থাকতে পারবে না। হাল ছেড়ো না, হতাশ হয়ো না। রাম রাম কর। ২১৬
শ্রীঃ।। ২২/৩/৬১
সীতারাম! জয়গুরু ইঞ্জিন, শুনছো? কি কৃপা তোমার উপর! এমন কৃপা কেহ পায়নি! তুমি অন্য চিন্তা করছো আর মা আমার জয়গুরু জয়গুরু কচ্ছেন, তুমি রাম রাম কর। ২১৭
সীতারাম! রাম রাম কর। রাম কে জান তো? রামই পরতত্ত্ব। রামই তুরীয় ব্রহ্ম। রামই অর্ধমাত্রা। তুমি ওঙ্কার পেয়েছ বলে মনে করো না যে রামকে অতিক্রম করেছো। ওঙ্কার রামের সূক্ষ্মরূপ। তুমি রাম রাম কর। ২১৮
সীতারাম! তুমি কেবল রাম রাম কর। জিহ্বা বশে আসুক। জিভ এখনও বশ হয় নি। নেবু দেখলে, খাবার জিনিস দেখলে, সরস হয়, এখনও তু্মি ইন্দ্রিয় জয় করতে পারো নি। কেবল রাম রাম কর।। ২১৯
সীতারাম! কাল অপূর্ব্ব অনির্বচনীয় আলো পেয়েছিলে – তাতে তোমার কোন পুরুষাকার ছিল? কে আলো দেখালেন, কেন দেখালেন তা তো তুমি জান না। তোমাকে একজন ধরে নিয়ে বুকে করে চলেছেন। তুমি নির্ভয়ে রাম রাম করতে থাক। ২২০
সীতারাম! রাম রাম গর্জ্জনে তোমার ইন্দ্রিয়গণও ভীত চকিত হবে, যমদূতগণও ভয়ে তোমার দিকে আসবে না। ভব বীজ ভাজা হয়ে যাবে। কেবল রাম রাম কর। ২২১
সীতারাম! রাম রাম কর। তুমি না চাইলেও সংসারের সুখ সম্পদ তোমার পায়ে লুটিয়ে পড়বে।তুমি জড় চেতন, ঠাকুর সব সেজে খেলা করছেন স্পষ্ট অনুভব করতে পারবে।তুমি সুস্পষ্ট সকল সেজে যে একজন খেলা করছেন, বেশ বুঝতে পারবে। কেবল রাম রাম কর।। ২২২
শ্রীঃ।।২৩/৩/৬৯
সীতারাম! শূন্যে শূন্যে শুনছো? শূন্যে শূন্যে মানে জান তো? মহাকাশরূপিণী মা আপনি শূন্যে শূন্যে করতে চলেছেন তাঁর সঙ্গে মিলবার জন্য। তুমি রাম রাম কর।। ২২৩
সীতারাম! একটি সজাগ আনন্দভোগ করছ; তা বলে এটি স্থির মনে করো না। যা আসে আসুক, যা হয় হোক, তুমি রাম রাম কর।। ২২৪
সীতারাম! কাল যে অলৌকিক জ্যোতি দেখলে ওটি সদা সর্ব্বদা রোজ দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে কেমন? যদি তার ইচ্ছা হয় হবে। ওটি কে জান তো? ওটি তোমার আত্মা। ওর ভিতর তুমি তোমার ইষ্টকে দেখতে পাবে, তুমি রাম রাম কর।। ২২৫
সীতারাম! তুমি রাম রাম কর, রাম আসবেন, দেখা দিবেন, এতে কোন সংশয় নাই। তোমার দর্শনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা হয় নি, তাই দেখতে পাচ্ছ না। জন্ম জন্মান্তরের কর্মরাশি তোমার আকাঙ্ক্ষা জাগতে দিচ্ছে না।তা হোক্,তুমি রাম রাম কর,কর্মরাশি কোথায় চলে যাবে।। ২২৬
সীতারাম! তুমি রাম রাম কর। যা চাই, যা না চাই, সব ঠাকুর ব্যবস্থা করবেন। তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। কেবল রাম রাম করলে কোথা দিয়ে কেমন করে হবে বুঝতে পারবে না। যতক্ষণ জেগে আছ, রাম রাম কর।। ২২৭
সীতারাম! রাম আর নাম ভিন্ন নয়। নাম ধরে থাকা, আর রাম ধরে থাকা এক কথা। রাম তোমায় কোথায় এনে রেখেছেন দেখছো তো? আরও কত কি আসবে। তুমি রাম রাম করে সব হাসিমুখে গ্রহণ কর। ত্যাগ করবে, তা বেশ তো, যত পার ত্যাগ কর কিন্তু রাম রাম ভুলো না।। ২২৮
শ্রীঃ।। ২৪/৩/৬১
সীতারাম! শুনছ ঐ জয়গুরু শূন্যে, মেঘ আরও কত কি! তুমি রাম রাম করতে ভুলো না। যা আসে আসুক, রাম না আসা পর্য্যন্ত নাম ছেড় না।। ২২৯
সীতারাম! রাম আসবেনই। এই নাদ এই জ্যোতি এসব তাঁরই লোক। তাঁর আগমন সংবাদ নিয়ে এরা এসেছে, তুমি রাম রাম করতে থাকো।। ২৩০
সীতারাম! তিনি বুদ্ধিদাতা, তোমাকে তিনিই দেখবার বুদ্ধি দিয়েছেন। তাঁরই ইচ্ছায় মৌন নিয়ে বসেছো। তিনি দেখা দেবেনই। তুমি রাম রাম করতে থাক। রাম রাম মহা আকর্ষণ মন্ত্র, এ মন্ত্রে তিনি স্থির থাকতে কিছুতে পারবেন না। দর্শন দেবেনই দেবেন।। ২৩১
সীতারাম! একবার নয় তিনবার তুমি তাঁর দর্শন পেয়েছো, হোক স্বপনের মত, তথাপি তু্মি ধন্য হয়ে গেছো; তিনি আছেন এ সম্বন্ধে তোমার কোন সংশয় নাই। তুমি দর্শন পাবেই পাবে রাম রাম কর।। ২৩২
সীতারাম! রাম রাম কর। তোমার দর্শনের জন্য আকুলতা আসুক। যে মুহূর্তে ঠিক আকুলতা হবে তিনি দেখা দিবেন। তুমি কেবল রাম রাম করতে থাক। তিনিই বুদ্ধিযোগ দেবেন। তার দ্বারাই তাঁকে প্রিয়তম রূপে লাভ করবে, কেবল রাম রাম কর।। ২৩৩
সীতারাম! অবশ্য তোমার প্রথম ও দ্বিতীয় দর্শন কোন সাধনায় পাওনি, তাঁর অহৈতুকী করুণাই সে দর্শনের কারণ ছিল তাঁর সে অহৈতুকী করুণা-সাগর শুকিয়ে যায় নি, করুণা-ভান্ডার রিক্ত হয়নি। তুমি রাম রাম কর।। ২৩৪
শ্রঃ।। ২৫/৩/৬১
সীতারাম! জয়গুরু জয়গুরু শুনছো, আলো দেখছো, রাম রাম কর। তোমার আশা পূর্ণ হবেই, দর্শন পাবেই। তোমাকে দর্শন দিবার জন্যই মা আমার জয়গুরু কচ্ছেন। রাম রাম কর।। ২৩৫
সীতারাম! রাম নাম তোমার গুরুদত্ত নাম। এ নাম ছেড়ো না। রাম নামে দুটি অক্ষরে সমস্ত বেদ, পুরাণ, তন্ত্র, ইতিহাসের সার আছে। রাম রাম করতে করতে একেবারে ওঙ্কারে গিয়ে পড়বে। রাম রাম কর।। ২৩৬
সীতারাম! ওঙ্কারও রামের নাম। অকার থেকে লক্ষ্মণ, উকার থেকে শত্রুঘ্ন, মকার থেকে ভরত হয়েছেন। অর্দ্ধমাত্রা রাম। আর রামের সান্নিধ্যবশে জগদাধাররূপিণী সীতা সকল দেহের উৎপত্তি, স্থিতি ও সংহার করেন। রাম রাম কর।। ২৩৭
সীতারাম! আবার শুনবে? – অকার হতে ব্রহ্মা জাম্ববান্‌ হয়েছেন, ঐরূপ উকার থেকে সুগ্রীব, মকার থেকে শিব হনুমান, বিন্দু ঈশ্বর স্বয়ং চক্ররাজ শত্রুঘ্ন, শঙ্খনাদ থেকে ভরত, কলার থেকে সাক্ষাৎ ধরণীধর লক্ষ্মণ, কলাতীতা ভগবতী সীতা, তৎপর পরমাত্মা পুরুষোত্তম রাম! তুমি রাম রাম কর।। ২৩৮
সীতারাম! তুমি ওঙ্কার পেয়ে মনে করো না তুমি রামকে ছাড়িয়ে গেছ। তোমার ওঙ্কারের অর্দ্ধমাত্রা রাম। তুমি রাম রাম করে পৌঁছে যাও। ২৩৯
সীতারাম! অর্দ্ধমাত্রাটি নিশ্চলা। সেইখানে তোমাকে যেতে হবে। কেবল রাম রাম কর। ভেতরে ডাক পড়বে, ক্রমে সূক্ষ্ম হতে সূক্ষ্ম হবে, আলোর ঢেউ খেলবে। তুমি আলো দেখ, নাম শুনো, আর রাম রাম কর।। ২৪০
শ্রীঃ।। ২৬/৩/৬১
সীতারাম! ঐ দেখ নর্মদা বাড়ছে, বাড়বার জন্য নর্মদা কোন চেষ্টাই করে নাই। কালই নর্মদাকে বাড়াচ্ছেন। তেমনি কালের অপেক্ষা করতে করতে রাম রাম কর, তুমিও বেড়ে একেবারে মিশে যাবে। রাম রাম কর।। ২৪১
সীতারাম! আদিত্যমন্ডলস্থ পুরুষের ভূঃ – মস্তক, ভূবঃ – বাহু, স্বর্‌ – পদ। এই সসাগরা বিশাল ধরণী তাঁর মস্তক, অন্তরীক্ষলোক তাঁর বাহু, আর পদ তাঁর স্বর্লোক, ত্রিলোক ব্যেপে এক বিরাট্‌ পুরুষ সূর্য্যমন্ডলে অবস্থান কচ্ছেন। তুমি রাম রাম কর, তুমি সেই পুরুষের মধ্যেই আছ বুঝতে পারবে।। ২৪২
সীতারাম! তোমার দক্ষিণ চক্ষুতে যে পুরুষ আছেন, ভূর্লোক তাঁর মস্তক, ভূবর্লোক তাঁর বাহু, স্বর্লোক তাঁর চরণ। এতবড় ভূ-র্ভূবঃ-স্ব ব্যেপে যিনি বিরাজ কচ্ছেন তিনি তোমার দক্ষিণ চক্ষুতে আছেন, তোমার দেহের ক্ষুদ্র একাংশ যে চক্ষু তাতে বাসকারী পুরুষ ত্রিভুবন আচ্ছন্ন করে আছেন। একবার ভাব তুমি কত বড়। একজনার কথা শুনবে, তাঁর গোপনীয় নাম ‘‘অহং’’ – আমি। রাম রাম কর, রাম রাম করে আমিকে ধরে ফেল।। ২৪৩
সীতারাম! আবার শুনবে? – হে দেব! অগ্নি তোমার মুখ, স্বর্গ-মস্তক, আকাশ-নাভি, পৃথিবী-চরণ, সূর্য্য-চক্ষু, দিগ্‌মন্ডল-কর্ণ। তোমায় নমস্কার। রাম রাম কর।। ২৪৪
সীতারাম! সব একের খেলা একই সব সেজে লীলা করছেন। রাম রাম করে এককে ধর।। ২৪৫
সীতারাম! সেই এক কে জান? এক তোমার আত্মা, অহং আমি। তোমার আমিই হলেন সেই ‘‘একমেবাদ্বিতীয়ং ব্রহ্ম’’, ঘন সৈন্ধবের মত জমাট বাঁধা সমবায় পুরুষ। তুমি রাম রাম কর।। ২৪৬
শ্রীঃ।। ২৭/৩/৬১
সীতারাম! উপনিষদ্‌ কি বল্লেন শুনছ তো – ‘‘সর্ব্বং ব্রহ্মৌপনিষদম্‌।’’ যা কিছু দেখছ, শুনছ, ভাবছ সব উপনিষৎ প্রতিপাদ্য ব্রহ্ম! এ জগৎটি ব্রহ্ম দিয়ে তৈরী। ব্রহ্ম কে জানো তো? ‘‘রাম এব পরং ব্রহ্ম’’, রামই পরম ব্রহ্ম। তুমি রাম রাম কর।। ২৪৭
সীতারাম! শ্রুতি বলছেন, – ‘‘একমেবাদ্বিতীয়ং ব্রহ্ম’’। এক স্বজাতীয় বিজাতীয় স্বগত ভেদশূন্য অদ্বিতীয় ব্রহ্ম। সেই ব্রহ্মই জগৎ। তুমি রাম রাম কর। বহু দর্শন দূর হোক্‌।। ২৪৮
সীতারাম! বস্ত্র যেমন সঙ্কোচ বিকাশ করলে বস্ত্রই থাকে, তেমনি জগৎ ব্রহ্মই। সৃষ্টিকালে বিকশিত জগৎ হন। আবার প্রলয়ে সঙ্কুচিত হয়ে জমাট বেঁধে থাকেন। তুমি রাম রাম করে সব রামময় দেখ।। ২৪৯
সীতারাম! সাপ যখন লম্বা হয়, তখনও সাপ, আবার কুন্ডলী পাকিয়ে থাকলেও সাপ। জগৎ তেমনি ব্রহ্ম হতে ভিন্ন নয় – ব্রহ্মই জগৎ, জগৎ ব্রহ্ম। তুমি রাম রাম কর।। ২৫০