কে আমি?

শ্রীশ্রীঠাকুর || প্রকাশ কাল - March 6 2018


কে আমি?

কাকে জিজ্ঞেস করি কে আমি? জ্ঞান হওয়া পর্য্যন্ত আমি আমি, উঠতে বসতে, খেতে শুতে আমি। কে সে আমি? কে আছ বল বল কাকে জিজ্ঞাসা করি কে আমি?

‘‘বেদ ভগবানকে জিজ্ঞাস কর্‌।’’

হে বেদ ভগবান্‌, বলুন কে আমি?

সদেব সৌম্যেদমগ্রমাসীদ্‌।

একমেবাদ্বিতীয়ম্।

হে সৌম্য! সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র অদ্বিতীয় ব্রহ্ম পরম মহান নিঃশব্দ শব্দময় শ্রীপুরুষোত্তম ছিলেন।

তিনি কে?

ওঙ্কার

ওমিত্যেতদক্ষরমিদং সর্ব্বং তস্যোপব্যাখ্যানং ভূতং ভবদ্‌ ভবিষ্যদিতি সর্ব্বমোঙ্কার এব যচ্চান্যং ত্রিকালাতীতং তদপ্যোঙ্কার এব।। ১

– মান্ডুক্যোপনিষৎ

যা কিছু সব এই অক্ষর ওঙ্কার।

ভূত’ ভবিষ্যৎ বর্ত্তমান সব ওঙ্কার এবং যা ত্রিকালের অতীত তাও ওঙ্কার।

তিনি দেখ্‌তে কেমন?

এরূপ – অকার উকার মকার নাদ বিন্দু

ওঁ। বিন্দুর উপর শ্রীভগবান্‌ পুরুষোত্তম আছেন।

হে পুরুষোত্তম ভগবান্‌! জ্ঞানলাভ করে পর্য্যন্ত কেবল আমি আমি করি, শয়নে-স্বপনে, জাগরণে-সুষুপ্তিতে, দিনে-রাতে, সুখে-দুঃখে, বাল্যে-যৌবনে, প্রৌঢ়ে-বার্দ্ধক্যে, মানে-অপমানে কেবল আমি আর আমি। সে আমি কে? কোথায় থাকি? দেখতে কেমন? কোথা থেকে এলাম কোথা যাবো? একথা আপনার কাছে জান্‌তে চাই, বলুন।
সোহকায়মত বহুস্যাং প্রজায়েয়েতি। – তৈত্তিরীয়োপনিষৎ
আমার ইচ্ছা হল বহু হবো জন্মাবো। যেমন আগুন থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হয়, তেমনি আমার তেজ থেকে ছুটলো স্ফুলিঙ্গ।
যথা সুদীপ্তাৎ পাবকাদ্‌ বিস্ফুলিঙ্গাঃ সহস্রশঃ প্রভবন্তে স্বরূপাঃ।
তথাক্ষরা দ্বিবিধাঃ সৈম্যভাবাঃ প্রজায়ন্তে অত্র চৈবাপযান্তি।। ১ – দ্বিতীয় মুন্ডক ১ম খন্ড
একটি কেশাগ্রকে শতভাগ করত তার এক ভাগের (একটির শতভাগের) এক ভাগের মত ‘চিদনু’ আমি হলাম এই ‘অহং’-ই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সকলের অহং –
ভাগো জীবঃ স বিজ্ঞেয়ঃ স চানন্তায় কল্পতে।। ৩/৯ – শ্বেতাশ্বরোপনিষদ্‌, ৫ম অঃ
জাগলেন পরমাণুরুপীণী প্রকৃতি; প্রাণ, অপাণ, সমান, উদান, ব্যান এই পঞ্চপ্রাণ; মন, বুদ্ধি শ্রোত্র, ত্বক্‌, চক্ষু, জিহ্বা, ঘ্রাণ বাক্‌, পাণি, পাদ, পায়ু, উপস্থ সব সুক্ষ্ম। বহু হব বহু হব। আমি আজ্ঞান আশ্রয় করত চৌরাশি লক্ষ যোনি হলাম।
স্থাবরাস্ত্রিংশলক্ষাশ্চ জলজা নবলক্ষকাঃ।
কৃমিজা দশলক্ষাশ্চ রুদ্রলক্ষাশ্চ পক্ষিণঃ।।
পশবো বিংশলক্ষাশ্চ চতুর্লক্ষাশ্চ মানবাঃ।
এতেষু ভ্রমণং কৃত্বা দ্বিজত্বমুপজায়তে।। – কর্ম্মবিপাক
ত্রিংশ লক্ষ স্থাবর, নব লক্ষ জলজ, দশ লক্ষ কৃমিজ, একাদশ লক্ষ পক্ষী, বিংশ লক্ষ পশু, চতুর্লক্ষ মানব – এই চতুরশীতি যোনি ভ্রমণ করত তবে জীব দ্বিজত্ব লাভ করে।
আমি চতুরশীতি যোনি ভ্রমণের পর দ্বিজত্ব লাভ করলাম্‌। আমার শ্রীভগদ্দর্শনের বাসনা জাগলো – আমিই গুরু হলাম, আমি মন্ত্র হলাম, নাদ জ্যোতি ইত্যাদি সাজলাম সোহং সাহং নাদ উঠ্‌তে লাগলো। তখন আমিই আমাকে প্রশ্ন করলাম কে আমি? আমিই আমাকে উত্তর দিলাম – কে আমি বুঝতে পাচ্ছো না? আমি তুমি সেজেছি। আমি আমি জগতের যা কিছু সব আমি, এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ড আমি। সব অহং-এর অহং আমি। আমি আমি আমি। কেবল্‌ একমাত্র আমি আছি। আমি আমি আমি।