মহামন্ত্র

শ্রীশ্রীঠাকুর || প্রকাশ কাল - April 18 2018

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
এই মন্ত্রে আটবার হরে, চারবার রাম নাম বলা হয়েছে – তার উদ্দেশ্য কি?
হরি শব্দের অর্থ হরণ, কৃষ্ণ শব্দের অর্থ কর্ষণ ও রাম শব্দের অর্থ রমণ। আটবার ‘হরে’ এই নামের দ্বারা ভক্ত কা’কে হরণ করবার জন্য শ্রীভগবানকে আহ্বান করেন?
ভূমিরাপোহনলো বায়ু খং মনো বুদ্ধি রেবচ। অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্নাঃ প্রকৃতিরষ্টধা ।। ৪
–শ্রীগীতা ৭ অঃ।
–ভূমি, জল, অনল, বায়ু, আকাশ, মনঃ, বুদ্ধি, অহঙ্কার এই অষ্টপ্রকারে বিভক্তা শ্রীভগবানের অপরা প্রকৃতি এই আটটীকে হরণ করবার নিমিত্ত মহামন্ত্রে আটবার এই নাম বলা হয়েছে। পৃথিবীর পাঁচটি তত্ত্ব – শোণিত, মাংস, নাড়ী, ত্বক এবং রোম। জলের পাঁচটী তত্ত্ব – শোণিত, লালা, মূত্র, স্বেদ ও শুক্র। তেজের পাঁচটী তত্ত্ব – ক্ষুধা, তৃষ্ণা, আলস্য, নিদ্রা ও এবং ক্লান্তি। বায়ুর পাঁচটী তত্ত্ব – চলন, বলন, ধাবন, প্রসারণ ও আকুঞ্চন। আকাশের পাঁচ তত্ত্ব – কাম, ক্রোধ, শোক, মোহ ও ভয়। মনের বৃত্তি – সংকল্প বিকল্প।
বুদ্ধির বৃত্তি – নিশ্চয়।
অহঙ্কারের বৃত্তি – অহং কর্ত্তা এই অভিমান। এই ভূমি প্রভৃতি আটটি অপরা প্রকৃতির বহির্মুখতা হরণ করবার জন্যই আটবার ‘হরে’ পদটী মহামন্ত্রে বলা হয়েছে, আট প্রকার প্রকৃতিই মহামন্ত্র জপের দ্বারা ভগবন্মুখী হয়।
চার বার কৃষ্ণ পদের দ্বারা কাদের কর্ষণ অর্থাৎ আকর্ষণের কথা বলা হয়েছে। মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার এরা অন্তরিন্দ্রিয় মাত্র। বহির্মুখতা হরণ করলে কার্য্য সিদ্ধি হবেনা, তজ্জন্য এদের কর্ষণও প্রয়োজন। মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার শব্দের দ্বারা চিত্তকেও গ্রহণ করা হয়েছে। ‘রসো বৈ সঃ’ আনন্দময় তাঁর রসতম স্বরূপে মনকে আকর্ষণ করলে মন রসতমের সঙ্কল্প বিকল্পই করবে। বুদ্ধি তাঁকেই নিশ্চয় করে স্থির হয়ে যাবে। অহঙ্কার – আমি কর্ত্তা এই অভিমান ত্যাগ করত – ‘আমি রসময়ের দাস’ এই অভিমান করতে থাকবে, চিত্ত নিয়ত আনন্দময়ের অনুসন্ধানে নিরত হবে। মনোবুদ্ধি চিত্ত ও অহঙ্কারকে আকর্ষণ করবার জন্য মহামন্ত্রে চারবার কৃষ্ণ নাম কথিত হয়েছে।
আর চিরবাঞ্ছিত চারিটী স্থানে রমণ করবেন বলে ভক্ত চারবার রামকে আহ্বান করেন।
জাগ্রৎ, স্বপ্ন, সুষুপ্তি ও তুরীয় এই চার অবস্থাতেই আনন্দময় লীলা করবেন বলে মহামন্ত্রের দ্বারা ভক্ত প্রাণারাম রামকে আহ্বান করে থাকেন – হে প্রিয়তম! তুমি আমার জাগ্রতে স্বপ্নে সুষুপ্তি ও তুরীয়ে রমণ কর। তুমি ভিন্ন যেন কোন অবস্থাতেই আমার আর কোন কিছু গ্রহণীয় না থাকে। তোমার রসে রসিত হয়ে আমি যেন সকল সময় থাক্‌তে পারি। হে রসতম! আমায় অমৃতময় রসময় মধুময় কর।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।