শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত

শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃত, শ্রীম || প্রকাশ কাল - April 18 2018


আগে হরিনাম না শ্রমজীবীদের শিক্ষা?
কালীকৃষ্ণ ঠাকুরকে প্রণাম করিয়া গাত্রোত্থান করিলেন। ঠাকুর বিস্ময়াবিষ্ট হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘‘কোথায় যাবে?’’
ভবনাথ – আজ্ঞা, একটু প্রয়োজন আছে, তাই যাবে।
শ্রীরামকৃষ্ণ – কি দরকার?
ভবনাথ – আজ্ঞা, শ্রমজীবীদের শিক্ষালয়ে (Baranagore Workingmen’s Institute) যাবে। (কালীকৃষ্ণের প্রস্থান)
শ্রীরামকৃষ্ণ – ওর কপালে নাই। আজ হরিনামে কত আনন্দ হবে দেখত? ওর কপালে নাই!
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
জন্মোৎসব ভক্তসঙ্গে – সন্ন্যাসীর কঠিন নিয়ম।
বেলা প্রায় সাড়ে আটটা বা নয়টা। ঠাকুর আজ অবগাহন করিয়া গঙ্গায় স্নান করিলেন নাজ; শরীর তত ভাল নয়। তাঁহার স্নান করিবার জল ওই পূর্বোক্ত বারান্দায় কলসী করিয়া আনা হইল। ঠাকুর স্নান করিতেছেন, ভক্তেরা স্নান করাইয়া দিল। ঠাকুর স্নান করিতে করিতে বলিলেন, ‘‘এক ঘটি জল আলাদা করে রাখো।’’
শেষে ওই ঘটির জল মাথায় দিলেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ আজ বড় সাবধান, এক ঘটি জলের বেশি মাথায় দিলেন না।
স্নানান্তে মধুর কন্ঠে ভগবানের নাম করিতেছেন। শুদ্ধবস্ত্র পরিধান করিয়া দুই-একটি ভক্তসঙ্গে দক্ষিণাস্য হইয়া কালীবাড়ির পাকা উঠানের মধ্য দিয়া মা-কালীর মন্দিরের অভুমুখে যাইতেছেন। মুখে অবিরত নাম উচ্চারণ করিতেছেন। দৃষ্টি ফ্যালফেলে – ডিমে যখন তা দেয়, পাখির দৃষ্টি যেরূপ হয়।
মা-কলীর মন্দিরে গিয়া প্রণাম ও পূজা করিলেন। পূজার নিয়ম নাই – গন্ধ-পুষ্প কখনও মায়ের চরণে দিতেছেন, কখনও বা নিজের মস্তকে ধারণ করিতেছেন। অবশেষে মায়ের নির্মাল্য মস্তকে ধারণ করিয়া ভবনাথকে বলিতেছেন, ‘‘ডাব নে রে।’’ মার প্রসাদী ডাব।
আবার পাকা উঠানের পথ দিয়া নিজের ঘরের দিকে আসিতেছেন। সঙ্গে মাস্টার ও ভবনাথ। ভবনাথের হাতে ডাব। রাস্তার ডানদিকে শ্রীশ্রীরাধাকান্তের মন্দির; ঠাকুর বলিতেন, ‘বিষ্ণুঘর’। এই যুগলরূপ দর্শন করিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। আবার বামপার্শ্বে দ্বাদশ শিবমন্দির। সদাশিবের উদ্দেশে প্রণাম করিতে লাগিলেন।
ঠাকুর এইবার ঘরে আসিয়া পৌছিলেন। দিখিলেন, আরও ভক্তের সমাগম হইয়াছে। রাম, নিত্যগোপাল, কেদার চাটুজ্যে ইত্যাদি অনেকে আসিয়াছেন, তাঁহারা সকলে তাঁহাকে, ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন। ঠাকুরও তাঁহাদের কুশল প্রশ্ন করিলেন।
ঠাকুর নিত্যগোপালকে দেখিয়া বলিতেছেন, ‘‘তুই কিছু খাবি?’’
ভক্তটির তখন বালকভাব। তিনি বিবাহ করেন নাই, বয়স ২৩ ২৪ হবে। সর্বদাই ভাবরাজ্যে বাস করেন। ঠাকুরের কাছে কখনও একাকী, কখনও রামের সঙ্গে প্রায় আসেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহার ভাবাবস্থা দেখয়া তাঁহাকে স্নেহ করেন। তাঁহার পরমহংস অবস্থা – এ কথা ঠাকুর মাঝে মাঝে বলেন। তাই তাঁহাকে গোপালের ন্যায় দেখিতেছেন।
ভক্তটি বলিলেন, ‘খাব’। কথাগুলি ঠিক বলকের ন্যায়।
নিত্যগোপালকে উপদেশ – ত্যাগীর নরীসঙ্গ একেবারে নষেধ।
খাওয়ার পর ঠাকুর গঙ্গার উপর ঘরের পশ্চিম ধারে গোল বারান্দাটিতে তাঁকে লইয়া চলিলেন ও তাঁহার সহিত আলাপ করিতে লাগিলেন।
একটি স্ত্রীলোক পরম ভক্ত, বয়স ৩১/৩২ হইবে, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে প্রায় আসেন ও তাঁহাকে সাতিশয় ভক্তি করেন। সেই স্ত্রীলোকটিও ওই ভক্তটির অদ্ভুত ভাবাবস্থা দেখিয়া তাঁহাকে প্রায় নিজের আলয়ে লইয়া যান।
শ্রীরামকৃষ্ণ (ভক্তটির প্রতি) – সেখানে কি তুই যাস?
নিত্যগোপাল (বালকের ন্যায়) – হাঁ যাই। নিয়ে যায়।
শ্রীরামকৃষ্ণ – ওরে সাধু সাবধান! এক-আধবার যাবি। বেশি যাসনে – পড়ে যাবি! কামিনী-কাঞ্চনই মায়া। সাধুর মেয়েমানষ থেকে অনেক দূরে থাকতে হয়। ওখানে সকলে ডুবে যায়। ওখানে ব্রহ্মা বিষ্ণু পড়ে খাচ্ছে খাবি।
ভক্তটি সমস্ত শুনলেন।