তপস্যা কাকে বলে

শ্রীশ্রীরামঠাকুর || প্রকাশ কাল - April 18 2018

Ram Thakur
তরুলতাদি সমাকীর্ণ স্থানেরে অরণ্য বলে। সেইখানে বাঘ, ভালুক প্রভৃতি বহু প্রকারের হিংস্র জন্তু বাস করে। তাগ সঙ্গে বাস করার যোগ্যতা আপনে অর্জন করছেন কি? আপনে হিংসা, দ্বেষ দূর হইয়া সমভাবাপন্ন হইতে পারছেন কি? যদি তা না হইয়া থাকে তবে তাগ সঙ্গে বাস করবেন কি কইরা? আপনের হিংসা তাগ হিংসা আকর্ষণ কইরা আনব। তপস্যা করার উপযুক্ত স্থান সংসার-অরণ্য। বহু তরুলতা, জন্তু-জানোয়ার সমাবেশে যেমন অরণ্য হয়, তেমনি বহু জনের সমাবেশে সংসার-অরণ্য হয়। এই সংসার-অরণ্যে আপনে আপনের পিতা, মাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, স্ত্রী, পুত্র, পরিজন, আত্মীয়স্বজন, পাড়া পড়শী, গ্রামবাসী, দেশবাসীর সঙ্গ লাভ করছেন। এই সকলের নিকট আপনে ঋণী বইলাই তাগ সঙ্গ পাইছেন।তা না হইলে আপনে পৃথিবীর অন্য স্থানেও জন্ম নিতে পারতেন।কিন্তু তা হয় নাই।যেহেতু আপনে অন্যত্র ঋণী নন।আপনে এগ নিকট ঋণী বইলাই এগ ঋণ যে কোন সময়, যে কোন কালেই হউক আপনের শোধ করতে হইব। এই ভিন্ন গতি নাই। ন ভুংক্তে ক্ষীয়তে কর্ম কল্প কোটি শতৈরপি। এগ প্রাপ্য এরা যে যেভাবে পারে, সে সেইভাবে কোটি কল্প পরে হইলেও আপনের নিকট থাইকা কড়ায়-গন্ডায় আদায় কইরা নিব। এতে আপনার লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, দুঃখ, কষ্ট হইবার ভয়ে এগ ঋণ শোধ না কইরা এগরে ফাঁকি দিয়া হিংস্র-জন্তু জানোয়ারপূর্ণ অরণ্যে যাইয়া যদি চক্ষু বুইজা বইসা থাকেন তবে কি তপস্যা হইল? তপস্যা তো হইলই না, বরং আপনের ঋণের বোঝা আরও ভারি হইয়া পড়িল। তপস্যা বলতে আপনে যা বুঝছেন তা না। তপস্যা বলে কারে? এই সংসারে এগ মধ্যে থাইকা এগ ঋণ শোধ করতে আপনের দুঃসহ লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, দুঃখ কষ্ট হইলেও তার বেগ অকাতরে সহ্য কইরা থাকারেই তপস্যা বলে। এইটা শুধু তপস্যা না, এইটা নিত্য তপস্যা। আমি আপনের কাছে এইটাই প্রত্যাশা করি। আমি আশীর্ব্বাদ করি, এই তপস্যায় আপনে জয়যুক্ত হন। মধুদা ‘‘জয় গুরু, জয় গুরু’’ বলিয়া উঠিলেন। ঠাকুর বলা বন্ধ করিলেন। সকলে উঠিয়া ঠাকুর প্রণাম করিয়া বাহিরে গেলে, আমি শ্রী পাদযুগলে কাঁদিয়া পড়িলাম। ঠাকুর আমার মাথায় হাত রাখিয়া বলিলেন, ‘‘ভয় কি, আমি তো আছি।’’ (রামভাই স্মরণে)