সহস্রশ্লোকী ভাগবত

ব্রহ্মচারী শিশিরকুমার || প্রকাশ কাল - April 18 2018

৬ষ্ঠ স্কন্ধ

(১৬৫, ১৬৬)

শ্রীরাজোবাচ

দৃষ্টশ্রুতাভ্যাং যৎ পাপং জানন্নপ্যাত্মনেহহিতম্‌।

করোতি ভূয়ো বিবশঃ প্রায়শ্চত্তমথো কথম্‌।।

ক্কচিন্নিবর্ত্ততেহভদ্রাৎ ক্কচিচ্চরতি তৎ পুনঃ।

প্রায়শ্চিত্তমথোহপার্থং মন্যে কুঞ্জরশৌচবৎ।।

৬।১।৯,১০

অনুবাদ – মহারাজ পরীক্ষিৎ জিজ্ঞাসা করিলেন – পাপকার্যের ফল যে দুঃখপ্রদ, তাহা কে না জানে? লোকমুখে এবং শাস্ত্র হইতে তাহা অবগত হওয়া যায়। তবুও মানুষ একবার প্রায়শ্চিত্ত করিবার পর পুনরায় অবশভাবেই পাপকার্যে প্রবৃত্ত হইয়া থাকে। অতএব প্রায়শ্চিত্ত দ্বারা নিষ্পাপ হওয়া যায়, এমন কথা কি করিয়া বলা চলে? কখনও কখনও প্রায়শ্চিত্তান্তর সাময়িকভাবে পাপকার্য হইতে নিবৃত্ত হইতেও দেখা যায় বটে, কিন্তু পুনরায় পাপকার্যে প্রবৃত্ত হইতেও দেখা যায়; অতএব পাপ প্রক্ষালনের জন্য প্রায়শ্চিত্ত ‘হস্তীর স্নানের ন্যায়’ ব্যর্থ বলিয়াই মনে হয় না কি?

অনুধ্যান – গুণের দ্বারা পরিচালিত হইয়াই কর্ম কৃত হয়। পাপের মূল সকাম তথা অশুভ কর্ম। পঙ্কিল সলিলে ধৌত করিলে যেমন মলিন বস্ত্র পরিষ্কৃত হয় না – তেমনি প্রায়শ্চিত্তরূপ সকল কাজ দ্বারাও পাপের  মূল বিনষ্ট হয় না। তাই ভগবান অর্জুনকে বলিলেন – ‘‘ত্রৈগুণ্যবিষয়া বেদা নিস্ত্রৈগুণ্যো ভবার্জুন’’ (গী ২/৪৫) – হে অর্জুন বেদসকলের বিষয় ত্রিগুণাত্মক দুঃখময় সংসার। অতএব তুমি তিন গুণের প্রতিই অনাসক্ত হইয়া গুণাতীত হও। (১৬৭, ১৬৮)

শ্রীবাদরায়ণিরুবাচ

কর্মণা কর্মনির্হারো ন হ্যাত্যন্তিক ইষ্যতে।

অবিদ্বদধিকারিত্বাৎ প্রায়শ্চিত্তং বিমর্শনম্‌।।

নশ্নতঃ পথ্যমেবান্নং ব্যাধয়োহভিববন্তি হি।

এবং নিয়মকৃদ্রাজন্‌ শনৈঃ ক্ষেমায় কল্পতে।। ৬।১।১১,১২

অনুবাদ – শুকদেব বলিলেন – প্রায়শ্চিত্তরূপ সকাম কর্ম দ্বারা পাপের মূল বিনষ্ট হয় না। অবিদ্যাই কর্মের জনক। আত্মজ্ঞান তথা ভগবদ্‌জ্ঞানই পাপমূলবিনাশক প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ। হে রাজন্‌! সুপথ্য সেবনকারী যেমন রোগাক্রান্ত হয় না, তেমনি মোক্ষকামী ব্যক্তি তদনুকুল কর্ম করিয়া ক্রমশঃ মোক্ষলাভের অধিকারী হইয়া থাকেন।

অনুধ্যান – জন্মমৃত্যুর মূলে যে কর্ম তাহা অজ্ঞানমূলক। হৃদয়াকাশে এই অজ্ঞানান্ধকার জ্ঞানসূর্যোদয়েই দূরীভূত হয়। এই জ্ঞান ভগবৎজ্ঞান। জ্ঞানই যে অজ্ঞানমূলক কর্মের বিনাশক, ভগবান স্বয়ংই তাহা বলিয়াছেন –

যথৈধাংসি সমিদ্ধোহগ্নির্ভস্মসাৎ করুতেহর্জুন।

জ্ঞানাগ্নিঃ সর্বকমাণি ভস্মসাৎ করুতে তথা।। (গী ৪/৩৭)

হে অর্জুন! প্রজ্বলিত অগ্নি যেমন কাষ্ঠরাশিকে দগ্ধ করিয়া পেলে, তদ্রুপ জ্ঞানরূপ অগ্নিও কর্মসকলকে ভস্মসাৎ করে।